Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শাকসবজির গুরুত্ব

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০% (৮.৪ মিলিয়ন) মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, WHO-2014| World Health Organization – Diabetes Country  Profile, 2016 - এর মতে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে প্রতি বছর মারা যায় ৬০৬০ পুরুষ এবং ৪৭৬০ মহিলা যাদের বয়স ৩০-৬৯ বছরের মধ্যে। ৭০ বা তার ওপরের বয়সে মারা যায় ৮২২০ পুরুষ এবং ৭৩৯০ মহিলা। ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিলতায় পুরুষ ৪.৬% এবং মহিলা ৭.৪% ভোগে।


বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। কিন্তু পারিবারিক পর্যায়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যের সমন্বয়ে পরিপূর্ণ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ এখনো একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী বর্তমানে দুই ধরনের অপুষ্টির শিকার। যেমন- খাদ্যের অভাবজনিত পুষ্টিহীনতা এবং জ্ঞানের অভাবে খাদ্যসংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগসমূহ, যেমন- ডায়াবেটিস, স্থূলতা, স্ট্রোক, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ক্যান্সার ইত্যাদি। জেনে রাখা জরুরি যে, খাদ্যসংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি রোগে মৃত্যুর হার অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর হারের চেয়ে বহুগুণ বেশি। খাদ্য তালিকায় শাকসবজি ও ফলমূল যোগ করে, খাবারে বৈচিত্র্যতা এনে, অনুপুষ্টির অভাব যাকে ‘হিডেন হাংগার’ বলে দূর করে এই অসংক্রামক রোগসমূহকে প্রতিরোধ করা যায়।   

 
ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি বিপাকে ত্রুটিজনিত রোগ। আমরা সারা দিন যেসব খাবার খাই তা পরিপাকের পর অধিকাংশই গ্লুকোজ হিসেবে রক্তে মিশে যায়। দেহকোষ গুলো আমাদের শরীরে শক্তি ও তাপ উৎপাদনের জন্য এই গ্লুকোজ গ্রহণ করে, আর এই কাজটি সম্পাদনের জন্য দেহকোষগুলোকে নির্ভর করতে হয় ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোনের ওপর যা অগ্ন্যাশয় থেকে নিসৃত হয়। ডায়াবেটিস হলে অগ্ন্যাশয় থেকে এই ইনসুলিন নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটে বা কম নিঃসৃত হয় অথবা অকার্যকর হওয়ায় কোষে গ্লুকোজের ঘাটতি ঘটে এবং রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়। এই অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলে। কারো রক্তে গ্লুকোজ সুনির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলেই তাকে ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা অভুক্ত অবস্থায় ৬.১ মি.মোল/লি. এবং গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৭.৮ মি.মোল/লি. এর নিচে থাকতে হবে। আর যদি ডায়াবেটিস হয়ে যায়, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণে আছে কি না সেটা বোঝা যাবে যদি রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা অভুক্ত অবস্থায় ৪.৪-৬.১ মি.মোল/লি., খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৪.৪-৮.০ মি.মোল/লি. এর মধ্যে থাকে এবং হিমোগ্লোবিন এ১ সি-৭.০% এর নীচে থাকে। গর্ভকালীন সময়ে অভুক্ত অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৫.৩ মি.মোল/লি. এবং খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৬.৭ মি.মোল/লি. এর নিচে থাকতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস হয়েছে তাদের উচিত এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা আর যাদের এখনো হয় নাই তাদের উচিত এটাকে প্রতিরোধ করা। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিস হবে ৭ম বৃহত্তম মরণ ব্যাধি।


ডায়াবেটিস আজীবনের একটি অসংক্রামক রোগ। বংশগত, পরিবেশগত, অলস জীবন যাপন, অসম খাদ্যাভ্যাসের কারণে এ রোগ হতে পারে। এর চিকিৎসার মূল উপাদান হচ্ছে শিক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে ওষুধ। এগুলোর সমন্বয়ে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করতে হবে, পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রক্তের গ্লুকোজের প্রধান উৎস হলো খাবার দাবার। এজন্যই ডায়াবেটিস হলে খাদ্য সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ডায়াবেটিস হলে মানুষ খুব চিন্তায় পড়ে যায়, এই বুঝি তার রিজিক চলে গেল। আসলে কি তাই? আসল কথা হলো খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা ডায়াবেটিস হওয়ার আগেও যেমন থাকে, ডায়াবেটিস হওয়ার পরেও ঠিক একই রকম থাকে। পুষ্টির কোনো তারতম্য হয় না। পার্থক্য হলো  ডায়াবেটিস হলে খাবারের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয় এবং প্রতি দিনই কোনো না কোনো ব্যায়াম করতে হয়, যার উদ্দেশ্য হলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাস্থ্যকে ভালো রাখা। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য কেমন হবে সেটা সবারই জানা দরকার। যেসব খাবার খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় সেসব খাবার যেমন- মিষ্টি জাতীয় খাবার, সাদা ভাত, সাদা রুটি, সিদ্ধ আলু ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রেখে যেসব খাবার খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেরিতে এবং ধীরে ধীরে বাড়ে যেমন আঁশজাতীয়  শাকসবজি, ফল, মাছ/মাংস, ডিম, দুধজাতীয় খাবার ইত্যাদি খাবারের তালিকায় যাতে থাকে সে দিকটা খেয়াল রাখতে হয়।


ডায়াবেটিস রোগীর খাবারে শাকসবজির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। সারা বছরই এ দেশে নানা ধরনের শাকসবজি উৎপাদন হয়। প্রকৃতির এই নেয়ামতকে বিজ্ঞানসম্মত কাজে লাগিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও প্রতিরোধ করা যায়। ডায়াবেটিস রোগীর সুবিধার জন্য শাকসবজিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-


১। শর্করা সম্বলিত সবজি যেমন- আলু, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা কলা, বরবটি, থোড়, মোচা, বিট, শিম, মাটির নীচের কচু, গাজর, কাঁকরোল, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, শালগম, ইঁচড়, ঢেঁড়স, বেগুন, মটর শুঁটি, কচুরমুখী, পাকা টমেটো।


২। শর্করাবিহীন শাকসবজি যেমন- সব ধরনের শাক, যেমনÑ লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, কলমিশাক, ডাঁটাশাক, কচুশাক ইত্যাদি এবং সবজি যেমন  ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, ওলকপি, কাঁচা টমেটো, কাঁচা পেপে, শসা, খিরা, উচ্ছে, করলা, ঝিঙা, চিচিঙা, পটোল, লাউ, চালকুমড়া, ডাঁটা, সজনা, ধন্দুল, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচ, মাশরুম ইত্যাদি।


উপরোক্ত শাকসবজিগুলো প্রতিটি মৌসুমেই কোনটা না কোনটা উৎপাদিত হয়। ডায়াবেটিস রোগীর উচিত প্রতি দিন একই ধরনের শাকসবজি না খেয়ে পাঁচ মিশালী শাকসবজি খাওয়া। এতে করে সব ধরনের শাকসবজির ভিটামিন মিনারেলস শরীরের কাজে লাগবে, খাবারে বৈচিত্র্য আসবে, পেট ভরবে, মনে পরিতৃপ্তি আসবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। বীজ যেমন- পরিবেশ পেলে গজিয়ে উঠে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও তেমনই নানা ধরনের রোগ হওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে হার্ট, কিডনি, লিভার, চোখ নষ্ট হয়ে যায়, নানা রকম ক্যান্সার হতে পারে, এমনকি শরীরের মাংসেও পচন ধরতে পারে। গর্ভকালীন সময়েও নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, গর্ভস্থ শিশু মৃত এবং প্রতিবন্ধী হতে পারে, অর্থাৎ ডায়াবেটিস, এহেনও কোনো রোগ বা জটিলতা নেই যেটা জন্মাতে সাহায্য করে না। আল্লাহ তায়ালা শাকসবজির ভেতর এতই নিয়ামত দিয়ে রেখেছেন যে সারা বছর যেসব শাকসবজি পাওয়া যায় তা দিয়েই এসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়। প্রতি দিনের খাবারে আঁশযুক্ত শাকসবজি থাকতে হবে। বিভিন্ন প্রকার শাক, তরি-তরকারি যেমন শিম, বরবটি, মাশরুম, লাউ, কুমড়া, গাজর, কাঁচা কলা, ডাঁটা এগুলোর বাইরের আবরণ হচ্ছে সেলুলোজ, একে আঁশ ও বলা যায়। এগুলো হজম হয় না, রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে দেয় না, ওজনও বাড়ায় না। এগুলো খাদ্যনালীর আর্দ্রতা পরিশোষণ করে ক্ষুদ্রান্ত্র পার হয়ে মলের সাথে বৃহদন্ত্রে¿ উপস্থিত হয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং মলত্যাগে সাহায্য করে। সুতরাং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ এসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য এমন কি কোলন ক্যান্সারও দূর করে। রক্তস্বল্পতায় শাকসবজির গুরুত্ব অনেক। পালংশাক, লালশাক, পিয়াজ, গাজর, মুলা, বিট, মিষ্টি আলু, টমেটো, খোসাসহ আলু, কচুশাক, লেটুস পাতা, শিম, বরবটি ইত্যাদিতে লৌহ ও ফলিক এসিড রয়েছে। সবজির মধ্যে বীট রক্তশূন্যতা রোধে খুবই উপকারী। এতে রয়েছে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সালফার, আয়োডিন, লৌহ, কপার, ভিটামিন বি-২, বি-৬, বি-১২ এবং ভিটামিন সি। উচ্চমানের লৌহের জন্য এটি রক্তের লোহিত কণিকা সক্রিয় করতে ও উৎপাদন করতে সাহায্য করে। দেহে ফ্রেশ অক্সিজেন সরবরাহও করে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যেটা হার্টের জন্য ক্ষতিকর। নায়াসিন কোলস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটা পাওয়া যায় আঁশযুক্ত সবুজ শাক সবজি, খোসাসহ আলুতে। তাছাড়া কাঁচা রসুনও খাওয়া যেতে পারে।   


তাজা শাকসবজি আমাদের প্রক্রিয়াজাত করে খেতে হয় অর্থাৎ রান্না করে খেতে হয়। রান্নার ওপরও ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার বাড়া-কমা অনেকটা নির্ভর করে। যেমন- আলুর চিপস বা ফ্রেন্সফ্রাইয়ের চেয়ে সিদ্ধআলু খেলে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। গাজর কাঁচা না খেয়ে সিদ্ধ অবস্থায় খেলে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যায়। শর্করা সংবলিত সবজিগুলো অনেকক্ষণ ধরে রান্না করলে সহজে হজম হয়ে শোষণ হয় এবং দ্রুত রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। শাকসবজি যেগুলো কাঁচা ও টাটকা খাওয়া যায় সেগুলো কাঁচা অবস্থায় খেলেই উপকার বেশি পাওয়া যায়। যেগুলো খোসাসহ রান্না করা যায় সেগুলো খোসাসহ রান্নাই ভালো। তবে সবজি বেশি সিদ্ধ না করে একটু কাঁচা কাঁচা করে রান্না করা উচিত। এতে স্বাদ, গন্ধ, রঙ এবং ভিটামিন অটুট থাকে।

 
বর্তমানে অপুষ্টির সমস্যা নিরসনে সারা বিশ্বে ড্রাগ বেসড অ্যাপ্রোচের তুলনায় ফুড বেসড অ্যাপ্রোচ অধিক টেকসই বলে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ এর মাধ্যমে নিজস্ব উৎপাদিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, কর্ম সংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ উন্নয়ন এবং চিকিৎসা খাতে ব্যয় কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নে ফুড বেসড অ্যাপ্রোচের ভূমিকা অপরিসীম। সুতরাং আসুন আমরা সকলে মিলে কৃষি উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতার পাশাপাশি খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একটি সুস্থ জাতি গঠনে সহায়তা করি।


‘স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ শাকসবজি ও ফল খাই,
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এর তুলনা নাই’।

 

খালেদা খাতুন

প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম, শাহবাগ, ঢাকা, ফোন : ০১৭০৩৭৯৬২৬৯


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon